হজ উমরাহ আদায়ের নিয়ম

সারাবিশ্ব থেকে হজযাত্রীরা পবিত্র নগরী মক্কায় জড়ো হচ্ছে। উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ পালন করবেন। যারা শুধু হজ পালন করবেন; তাদের জন্য হজের ১১টি কাজের বিবরণ ও দোয়া তুলে ধরা হলো-

ইফরাদ হজ
শুধু হজ আদায়কে ইফরাদ হজ বলে। যারা ইফরাদ হজ করবে, তারা ওমরা করতে পারবে না। যারা এ হজ আদায় করেন তাদেরকে ‘মুফরিদ’ বলা হয়। সাধারণত বদিল হজকারীরাই ইফরাদ হজ করে থাকেন। আর ইফরাদ হজকারীর জন্য কোরবানিও দিতে হয় না। ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু; হাজিগণ যে হজই পালন করবেন, প্রত্যেক হজের ফরজ কাজগুলো একই।

১. ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
ইফরাদ হজ পালনে সরাসরি পবিত্র নগরী মক্কায় গেলে নিজ দেশ থেকেই ইহরাম বাঁধবে। ইফরাদ হজ আদায়কারীরা ইহরাম বাঁধার পর থেকে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবেন।

হজের নিয়ত
ইফরাদ হজ পালনে সরাসরি পবিত্র নগরী মক্কায় গেলে নিজ দেশ থেকেই ইহরাম বাঁধবে। ইফরাদ হজ আদায়কারীরা ইহরাম বাঁধার পর থেকে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবেন।

হজের নিয়ত

اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا فَيَسِّرْهُ لِى وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّى

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান। ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিননি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি হজ পালনের ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং তা কবুল করুন।’ অতঃপর উচ্চস্বরে ৪ ভাগে তালবিয়া পড়া। (১ বার তালবিয়া পড়া শর্ত)

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ : ‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’

তালবিয়ার পর এ দোয়াটিও পড়া-

اَللَّهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَ الْجَنَّةَ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউ’জুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান্নারি’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসুন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’

মসজিদে হারামে প্রবেশের দোয়া

ওমরা উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ وَ الصّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ أعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْم وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ اَللهُمَّ افْتَحْ لِىْ اَبْوَابَ رَحَمَتِكَ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশশায়ত্বানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।

কাবা ঘর দেখে এ দোয়া পড়া-

اَللَّهُمَّ أَنْتَ السّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ حَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ اَللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ تَكْرِيْماً وَ مَهَاَبَةً وَ زِدْ مَنْ شَرّفَهُ وَ كَرّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَاعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ بِرُّا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু হাইয়্যিনা রাব্বানা বিস্‌সালাম। আল্লাহুম্মা যিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তা’জিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মুহাবাতান; ওয়া জিদ মান শার্‌রাফাহু ওয়া কার্‌রামাহু মিম্মান হাজ্জাহু ওয়া’তামারাহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তা’জিমান ওয়া বির্‌রা।

২. তাওয়াফে কুদুম (সুন্নাত)

ইফরাদ হজ আদায়কারীরা পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশের পর আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করাই হলো তাওয়াফে কুদুম। নামাজি ব্যক্তি যেভাবে মসজিদে গিয়ে ‘দুখুলিল মসজিদ’ নামাজ আদায় করেন, তেমনি ইফরাদ হজ আদায়কারীরা এ তাওয়াফ (তাওয়াফে কুদুম) করবেন। ইফরাদ হজ আদায়কারীরা যেহেতু ইহরাম অবস্থায় থাকবেন, তাই তাওয়াফে কুদুমে তারা ইজতিবা ও রমল করবেন। সাধারণভাবে তাওয়াফ শুরু করার সময় এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَر – اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و بصديقًا بِكِتَابِكَ وَرَفَعًا بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার; আল্লাহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা ওয়া রাফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা।’

তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাম দিকে রেখে রোকনে শামি ও রোকনে ইরাকি অতিক্রম করে রোকনে ইয়ামেনিতে আসবে। এ স্থানে তালবিয়া, তাকবির-তাসবিহ ইত্যাদি পড়বে।

রোকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করে এ দোয়া পড়া

এরপর (সম্ভব হলে) রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করবে। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবে এবং কুরআনে শেখানো এ দোয়া পড়বে-

رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।’

৩. সাঈ (ওয়াজিব)

হজের আগে (৮ জিলহজের) আগে সম্ভব হলে সাঈ করা। সম্ভব না হলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর সাঈ আদায় করা।

হজের প্রস্তুতি

জিলহজ মাসের ৭ তারিখ হারামশরিফে হজের নিয়মাবলীর ওপর যে খুতবা দেয়া হবে, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা বা হজের বিষয়াবলী বুঝে নেয়া। অতঃপর ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনায় গিয়ে উপস্থিত হওয়া।

৪. মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)

জিলহজ মাসের ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত (জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর) নামাজ মিনায় পড়া (মুস্তাহাব) এবং তথায় অবস্থান করা (সুন্নাত)। ৯ জিলহজ ফজরের পর সম্ভব হলে গোসল অথবা অজু করে দুপুরের আগে আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

৫. আরাফার ময়দানে অবস্থান (ফরজ)

আরফায় অবস্থানই হজ। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ জোহরের আগেই হজের অন্যতম রোকন পালনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ কাজ। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় আসার প্রস্তুতি স্বরূপ গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া-

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَر