আগামী বছরের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। নিবন্ধন চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাবি আমলে নিয়ে হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আসছে। হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি উবায়দুল্লাহ বাদল

কালের কণ্ঠ : দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাবি ছিল হজ এবং ওমরাহর খরচ কমানো। দায়িত্ব নিয়ে আপনিও হজের খরচ কমানোর কথা বলেছিলেন। একটু খুলে বলবেন কি?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। হজ প্যাকেজের মূল্য কমানো সম্ভব বলে মনে করে সরকার। আমাদের হজ কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। যেখানে ঢাকা-জেদ্দা রোডে স্বাভাবিক বিমানভাড়া ৭০-৮০ হাজার টাকা, সেখানে হজে বিমানভাড়া কেন এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হবে! এরই মধ্যে আমরা বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। তারাও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে খরচ কমাতে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আশা করছি বিমানভাড়ার বড় অঙ্কই কমানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া প্রতি হাজিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঁচ হাজার টাকা হারে দিতে হয়। এই টাকাও কমানো যেতে পারে। হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের সিন্ডিকেট রাখব না।

ড. খালিদ হোসেন : আমাদের দেশের হজ কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। গত বছর (২০২৪) একজন হাজির জন্য সৌদি সরকারকে এক লাখ ৬৫ হাজার ১৭১ টাকা দিতে হয়েছে। এগুলো জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় হাজিদের সেবাখাতের খরচ। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বের সৌদি আরব যাচ্ছি। সেখানে সৌদি হজ এবং ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করব। নিশ্চয় তাঁরা আমাদের যৌক্তিক প্রস্তাব মেনে নেবেন।

কালের কণ্ঠ : কোন কোন খাতে আপনারা খরচ কমানোর প্রস্তাব দেবেন?

ড. খালিদ হোসেন : আমরা এরই মধ্যে কিছু খাতের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে ‘টকিং পয়েন্ট’ প্রস্তুত করেছি। সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এর মধ্যে আছে—হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক ভিসা প্রসেসের খরচ ও মোনাজ্জেম ভিসা ফি কমানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ কমানো, মিনা ও আরাফার ময়দানে হাজিদের অবস্থান, শোয়ার বা বসার জায়গা অনেক সংকীর্ণ; সেটা বাড়াতে অনুরোধ করব। হজের পাঁচ দিন হাজিদের খাবার সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ জন্য আমাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। আমরা এটা বাতিলের প্রস্তাব দেব। এতে খরচ অনেক কমবে। ৯ জিলহজ পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। ৩ জিলহজ পর্যন্ত হজ ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব থাকবে।

কালের কণ্ঠ : আকাশপথের পাশাপাশি সমুদ্রপথে হাজি পাঠানো হবে কি না?

ড. খালিদ হোসেন : হ্যাঁ। এবার পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্রপথে তিন হাজার হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাব রয়েছে। এতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা কম লাগবে। সৌদি সরকার রাজি হলে হজযাত্রীদের এবার সমুদ্রপথেও পাঠানো হবে।

কালের কণ্ঠ : ভবিষ্যতে কী ধরনের হজ প্যাকেজ আসতে পারে?

ড. খালিদ হোসেন : আমরা আগামীতে দুই ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করব। একটি হলো মক্কার হেরেম শরিফ ও মিসফালাহ এবং এর আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িভাড়াসহ একটি প্যাকেজ। এর মূল্য একটু বেশি হতে পারে। আর অপরটি হবে আজিজিয়া প্যাকেজ। এটি হলো মক্কা থেকে দুই-তিন কিলো দূরে আজিজিয়া ও সারে খলিল নামক স্থানে এই প্যাকেজের হাজিদের রাখা হবে। সেখান থেকে হেরেম শরিফে যাতায়াতের জন্য বাস বা যানবাহন থাকবে। এই প্যাকেজের বাড়িভাড়া কম হওয়ায় প্যাকেজমূল্যও কম হবে।

কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. খালিদ হোসেন : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।